এই মুহূর্তে




পাইক বিদ্রোহের ১৪ নেতাকে ঝোলানো হয়েছিল মেদিনীপুরের এই ফাঁসিকাঠে

courtesy google




নিজস্ব প্রতিনিধি :  দেওয়ালে দেওয়ালে গাঁথা বিপ্লবীদের রক্ত,এখানে কান পাতলেই শুনতে পাবেন চিৎকারের আওয়াজ। এখনও হাড় হিম হিম করা ঘটনা ভেসে বেড়ায়। মনে করিয়ে দেয় আজ থেকে বহু বছর আগের মহান বিপ্লবীদের ত্যাগের কথা। রক্তে রাঙা এই জায়গাটির নাম হল মেদিনীপুরের ফাঁসিডাঙা। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী ছিলেন মেদিনীপুরের রাণী শিরোমণি। তিনিই ছিলেন দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-‘৯৯) নেত্রী। এই চুয়াড় বিদ্রোহ আসলে ছিল কৃষক বিদ্রোহ। ইংরেজরা ঘৃণ্যভরে নাম দিয়েছিল ‘চুয়াড়’ বিদ্রোহ।

আন্দোলন যখন ভয়াবহ রুপ নিল, তখন আন্দোলন প্রতিহত করতে চারিদিকে যখন খোঁজো খোঁজো রব ইংরেজদের। ‘কোথায় গেল সেই চুয়াড় নেত্রী’..তখন রাণী শিরোমণি কর্ণগড়ের প্রাসাদ থেকে গোপন সুড়ঙ্গপথে মেদিনীপুরের আবাসগড়ে পালাতে গিয়ে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল রাণী বন্দিনী হলেন ইংরেজদের হাতে।

এরপরেও এই আন্দোলন কিন্তু থেমে থাকে নি। মেদিনীপুরের গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, কেশপুর, শালবনী, শিলদা, লালগড়, রামগড় প্রভৃতি এলাকায় ‘বাগড়ী নায়েক বিদ্রোহ’ বা ‘পাইক বিদ্রোহ’ রূপে এই আন্দোলন বৃহৎ হতে শুরু করে। ১৮০৬ থেকে ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদিম জনজাতি সম্প্রদায়ের (লোধা, শবর, সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডা, ভূমিজ, বাগদী, কুড়মি প্রভৃতি) পাইক ও নায়েক’রা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। নেতৃত্বে ছিলেন গড়বেতার বাগড়ী রাজ বংশের রাজা ছত্র সিংহের বিশ্বস্ত পাইক সর্দার অচল সিংহ। তাঁদের দাবি ছিল, চাষিদেরকে দিয়ে জোর করে নীল চাষ করানো যাবে না। তাঁদের জমি ও প্রাপ্য ফসল কেড়ে নিলে চলবে না। এই অরাজকতা বন্ধ করতে হবে। জমিদারদের নগর রক্ষার দায়িত্বও কেড়ে নেওয়া যাবে না।

এই আন্দোলন বৃহৎ হতে শুরু করল। হাজার হাজার চাষি, সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ইংরেজরাও অত্যাচারও বাড়ানো হল! রাতের অন্ধকারে আন্দোলনকারীদের মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো ল্যাম্প পোস্টে বা গাছের ডালে! এতও যখন দমানো গেল না তখন ১৮১৫ সালে চার্লস রিচার্ড ও মিস্টার হেনরি নামে ২ জন অত্যাচারী ইংরেজ সৈন্যাধ্যক্ষকে পাঠানো হল এই এলাকায়। তারাই চন্দ্রকোনার বসনছড়া এলাকার একটি ফাঁকা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে বিচারালয় স্থাপন করে এবং একটি বটগাছের নীচে তৈরি করা হয় ফাঁসির মঞ্চ।

এই মঞ্চেই গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা এলাকার ‘নায়েক বিদ্রোহ’ (বা, পাইক বিদ্রোহ) এর নেতা যুগল, কিশোর, সুবল, রাজেন, হাবল, ফাগু প্রমুখ ১৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়! (বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্য) ঐতিহাসিক সেই স্থানটিই পরবর্তীকালে ফাঁসিডাঙা নামে পরিচিত। কথিত আছে যে, এই অঞ্চলের আন্দোলনের প্রধান নেতা অচল সিংহ’কে ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা গুলি করে মেরে ফেলে। যদিও একটা সময়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকলেও, ঐতিহাসিক এই স্থানটি বর্তমানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফাঁসিডাঙার মাঠ এবং ফাঁসির মঞ্চ সংস্কার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতিহাসের পাতায় মেদিনীপুরের(বর্তমান, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার)চন্দ্রকোনা এলাকার এই ফাঁসিডাঙা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ না থাকলেও, এই এলাকার নানা প্রামাণ্য নথি এবং সমাজ গবেষক ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিত্বদের দেওয়া উপরের সব তথ্যনুযায়ী তুলে ধরা হয়েছে।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

জানেন কি, বিশ্বকর্মার হাতে হাতুড়ি ও দাঁড়িপাল্লা থাকে কেন ?

জেগে ওঠবে ডুবে যাওয়া প্রাচীন শহর! গিলে খাবে অন্ধকার! জেনে নিন কী ঘটবে কলিযুগের শেষে ?

আফ্রিকার পর এবার ভারত, খোঁজ মিলল মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত প্রথম রোগীর

আসছে বিশ্বকর্মা পুজো ! জানেন কী বিশ্বকর্মা আসলে কে ?

কেন কৈলাস পর্বতে আজও কেউ উঠতে পারেনি? জানুন কৈলাসের অবাক করা তথ্য

জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, এই নিয়ে রুজি রোজগারের লড়াইয়ে মত্ত সুন্দরবনবাসী

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর