নিজস্ব প্রতিনিধি: ৫৭ ভোটে জয় যদি পরাজয়ের নামান্তর হয় তাহলে ১ লক্ষ ৬৪ হাজারেরও বেশি ভোটে জয় কীসের প্রতীক? জনরোষ, হ্যাঁ দিনহাটায় বিজেপির রেকর্ড ভোটে পরাজয়ের জেরে রাজ্যের সব রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই একটি বিষয়ে একমত। আমজনতার জনরোষেই দিনহাটা হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। সেই সঙ্গে এই ফলাফল এটাও দেখিয়ে দিল বিজেপির সংগঠন সেখানে কতটা বেহাল। সেই বেহাল দশা আরও প্রকট করেছে যে নিশীথ প্রামাণিক ও অশোক মণ্ডলের বুথে বিজেপির হার। দিনহাটার উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন অশোক। কিন্তু সেখানে নিশীথের মুখকে সামনে রেখেই ভোটে গিয়েছিল বিজেপি। নিশীথ শুধু কোচবিহারের সাংসদই নন, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও। তাই শুধুই দুর্বল সংগঠনের জন্য এই হার হয়েছে একথা বলা যায় না। সেখানে নিশীথেরও পরাজয় হয়েছে। মানুষ তাঁকে প্রত্যাখান করেছে। আর তার জেরেই এদিন বিজেপির হারের জেরে তৃণমূল শুধু যে কটাক্ষ হেনেছে তাই নয়, জেলা বিজেপির সভানেত্রীও নিশীথকে খোঁচা দিয়েছেন। এমনকি নিশীথের মন্ত্রীত্ব ও সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করার দাবিও উঠে গিয়েছে। এমনকি দিনহাটায় বিজেপির জামানতও বাজেয়াপ্তও হয়েছে।
দিনহাটায় এবার আক্ষরিক অর্থেই ছিল বিজেপি ও তৃণমূলের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। কেননা এই কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত ছিল রাজবংশী ভোটের বিষয়টিও। সেই মর্যাদার লড়াইয়ে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ১ লক্ষ ৬৪ হাজারেরও বেশি ভোটে। তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ পেয়েছেন ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৫৩ ভোট। সেখানে বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডল পেয়েছেন মাত্র ২৫ হাজার ৩৮৭ ভোট। এর থেকেও চমকে দেওয়ার মতো তথ্য এটাই যে নিশীথ যেখানে ভোট দেন সেই ভেটাগুড়ি এলাকার লালবাহাদুর শাস্ত্রী বিদ্যালয়ে থাকা বুথে বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডল পেয়েছেন মাত্র ৯৫টি ভোট। সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৪৬১টি ভোট। আবার অশোক মণ্ডলের নাম রয়েছে যে বুথে সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৪৬০ ভোট আর বিজেপি পেয়েছে ১৫৬ ভোট। অর্থাৎ দুই বুথেই তৃণমূলের কাছে গোহারান হেরেছে বিজেপি। এরপরেই নিশীথের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে কটাক্ষের বন্যা।
দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ এদিন জয়ের পরে পরেই নিশীথকে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘আজ প্রমাণ হয়ে গিয়েছে উনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নন, কেন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী মন্ত্রী। উনি কোচবিহারের স্বঘোষিত মহারাজও। কমল গুহ অনেক কিছু পারেননি। আমি পেরেছি। এখানে যা ফল হল তা কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। মানুষ এরপর নিশীথের নামও ভুলে যাবে।’ আবার কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতীম রায় সাফ জানিয়েছেন, ‘এই রায় বলে দিচ্ছে কেন্দ্রের মন্ত্রী থাকার আর কোনও যোগ্যতাই নেই নিশীথ প্রামাণিকের। তিনি এখন সাংসদ থাকারও যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা চাই এই দুই পদ থেকেই পদত্যাগ করুন তিনি। নাহলে আগামিদিনে উনি বিজেপির কাছেই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন।’ নিশীথকে ঘিরে যে বিজেপিতেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে তার প্রথম নমুনা এদিন মিলেছিল অশোক মণ্ডলকে ঘিরে বিজেপি কর্মীদেরই একাংশের বিক্ষোভ। পরের নমুনা জেলা বিজেপির সভানেত্রী মালতী রাভার বক্তব্য। তিনি জানিয়েছেন, ‘ওঁর দায়িত্বশীল তো অবশ্যই হওয়া উচিত ছিল। মানুষ এমন ভাবে কখনও ভোট দেয়? কেন এমন ফল হল তা ওনাকেই দেখতে হবে।’ অর্থাৎ এই হারের জের কোচবিহার জেলা বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত নিজেদের ঘাড়ে নিতে চাইছেন না। তাঁরা হারের জের নিশীথের ঘাড়েই ঠেলে দিয়েছেন।