নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপির নেতারা বার বার বাংলা ভাগের দাবি তুলছেন। কেউ কেউ তো আরও এক দু পা এগিয়ে দলের সভা থেকেই ঘোষণা করে দিচ্ছেন ‘কেন্দ্র সরকার উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য বলে ঘোষণা করে দেবে খুব শীঘ্রই।’ যদিও সেই সব কথায় কান দিচ্ছেন না কেউই। কিন্তু রাজনীতির স্বার্থে অনেকেই বাংলা ভাগের ইস্যুকে জিয়ে রাখছেন দলীয় সভার মঞ্চ থেকে পদযাত্রা ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই দলে আছেন বিমল গুরুংও(Bimal Gurung), যাকে কার্যত পাহাড়ের(Darjeeling Hill) জনতা সরিয়ে দিয়েছেন তাঁদের হৃদয় থেকে। এখন সেই পাহাড়ে পায়ের নীচে মাটি খুঁজতে আবারও পৃথক গোর্খাল্যান্ড(Gorkhaland) রাজ্য গঠনের ডাক দিয়ে ২ দিনের এক সেমিনার ডেকেছিলেন গুরুং। কিন্তু সেই ডাকে হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড ছাড়া আর কেউই সাড়া দিল না। কেউ সেমিনারও প্রতিনিধিও পাঠাল না। যদিও গুরুং জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী নভেম্বর মাস থেকেই পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবেন তিনি। এমনকি সেই দাবিকে সামনে রেখে তিনি দিল্লিতেও ধর্নায় বসার চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানিয়েছেন।
গুরুংয়ের দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাহাড়ের রাজনীতিতে কার্যত তাঁদের গ্রহণযোগ্যতাই হারিয়ে ফেলেছে। একসময় যার গুরুংয়ের কথায় ওঠাবসা করতেন, তাঁর হাত-পা-কান-নাক-চোখ হয়ে উঠেছিলেন তাঁরাই এখন মোর্চা ছেড়ে পৃথক পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলেছেন। তাঁদের দাপটে শুধু যে গুরুং এখন পাহাড়ের রাজনীতিতে চূড়ান্ত ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন তাই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি নিজেই নিজেকে হাস্যকর পদার্থে পরিণত করেছেন। একই সঙ্গে পাহাড়ের পুরসভা নির্বাচন ও জিটিএ নির্বাচনে চূড়ান্ত ভাবে পরাস্ত হয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা(GJMM)। জিটিএ নির্বাচনের সময়ে গুরুং আবার অনশনে বসেছিলেন সেই নির্বাচন আটকাতে। কিন্তু সেই অনশনকে পাহাড়ের কোনও নেতাই সেভাবে পাত্তা দেননি। ভিড় জমাননি পাহাড়ের জনতাও। এখন সেই গুরুং পাহাড়ের সমর্থন ফিরে পেতে আবারও সেই বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলনকেই হাতিয়ার বানাচ্ছেন। ফের পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবি তুলেছেন তিনি। সেই সূত্রেই ডাক দিয়েছিলেন ২ দিনের সেমিনারের।
গুরুং এই সেমিনারকে সফল করে তুলতে জিএনএলএফ, তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, হামরো পার্টি ও গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড ছাড়া সেই ডাকে কেউই সাড়া দেয়নি। কোনও দলই এই সেমিনারে তাঁদের কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি। আর এই ঘটনাই প্রকট ভাবে তুলে ধরেছে এক চরম সত্যকে। আর তা হল পাহাড়ের একচ্ছত্র আধিপত্য হারিয়ে বসে আছেন গুরুং। পাহাড়ের মানুষের সহানুভূতি ও আস্থা ফিরে পেতে এখন তিনি আবারও তাঁর পুরাতন বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলনকে হাতিয়ার বানাচ্ছেন। পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবি জানাচ্ছেন। নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব গভীর সংকট বুঝে ফের পাহাড়ে আগুন লাগাতে চাইছেন। গুরুং জানিয়েছেন তিনি তাঁর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সরব থাকবেন আগামী দিনেও। সেই সঙ্গে গোর্খাল্যান্ড এর দাবিকে সামনে রেখে তিনি একটি সর্বদলীয় ন্যাশনাল কমিটি ফর গোর্খল্যান্ড তৈরি করবেন। যদিও গুরুংয়ের এইসব দাবিকে কেউই পাত্তা দিচ্ছেন না। বিশেষ করে পাহাড়ের রাজনীতিতে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, পাহাড়বাসী গুরুংয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এখনই আর কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সায় দেবেন না। কারণ তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন পাহাড়ে আগুন জ্বললে তাতে আমজনতার কতখানি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাহাড়ের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাশপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বার বার পাহাড়ে এসে যে উন্নয়নের ছবি তুলে ধরছেন, যে সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পে হাত দিচ্ছেন তাতে পাহাড়ের মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছে তৃণমূলও। তাই পাহাড়বাসী আর ভুল পথে পা বাড়াবে বলে মনে করছেন না অভিজ্ঞজনেরা।