নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে ফের জেলায় জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করলেও, রাজ্যের সর্বস্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসার সুযোগ পাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দীর্ঘ দিন পর মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বসেছেন প্রশাসনিক বৈঠকে। সেখানে জেলার স্তর থেকে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক, পুলিশ সুপাররা যেমন উপস্থিত রয়েছেন তেমনি রয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, সচিব ও আধিকারিকেরাও। আর সেই বৈঠক থেকেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বিষয়ে কড়া বার্তা দিলেন সরকারি আধিকারিক থেকে তোলাবাজদেরও।
২০২১ সালের ২ মে রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসেও, কোভিড সংক্রমণের কারণে রাজ্যের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। ২০২০ সালে কোভিডে সূচনা হলে এই ধরনের বৈঠক বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় থেকেই জেলা স্তরের ভার্চূয়াল বৈঠকই ছিল প্রশাসনের একমাত্র হাতিয়ার। কিন্তু এদিন তিনি জেলা ও রাজ্যস্তরে মেলবন্ধন ঘটাতে এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। সেই বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন কড়া বার্তা দিলেন বিধবা ভাতা নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, ‘বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতা ও মানবিকভাতা যোগ্য লোকের হাতে যাচ্ছে কি না তা ভাল করে নজর করতে হবে। আমার কাছে খবর আসছে বার্ধক্য ভাতা ঠিক মতন দেওয়া না। অনেকেই আবেদন করেও তা পাচ্ছেন না। দেখতে হবে যোগ্য লোক যেন তা পান। প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে যাতে সবার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যায় সেটাও দেখতে হবে। অনেকেই খুব ভাল কাজ করছেন, কিন্তু কেউ কেউ কাজ করতে চান না। এ বার কাজ করা শিখে নিন। কোভিড আর ভোটের অজুহাত দিয়ে সরকারি প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখা চলবে না।’
একই সঙ্গে এদিনের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘কন্যাশ্রী প্রকল্পে কলকাতা পিছিয়ে আছে কেন? কাজের নিরিখে বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমান কেন পিছিয়ে পড়ছে? কোভিডের কারনে রাজস্ব সংগ্রহ কমেছে অনেকটা। কেন্দ্রের থেকে রাজ্যের পাওনা ৯০ হাজার কোটিরও বেশি। এখনও সেই টাকা পাইনি। কোনও অপ্রয়োজনীয় বা বাজেট বহির্ভূত খরচ যাতে না হয় সেটা সবাইকে দেখতে হবে। সরকারি অর্থ যাতে সঞ্চয় হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়া কোনও নতুন প্রকল্প হাতে নেবেন না, ঘোষণাও করবেন না।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী শিল্পক্ষেত্রে ও সীমান্ত এলাকায় তোলাবাজি প্রসঙ্গে কড়া বার্তা দেন। বলেন, ‘প্রাইভেটের নাম করে করে খাওয়া হচ্ছে। সীমান্তে ট্রাক টার্মিনাসে টাকা নয়ছয় হচ্ছে। ট্রাক টার্মিনাসে কেউ কেউ টাকা তুলছেন, এতে ব্যক্তির পকেট ভরলেও সরকারের কোষাগারের কোনও সুবিধা হচ্ছে না। এ সব আর চলবে না। এটা পরিবহণ দফতরকে দেখতে হবে। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন সমস্ত ট্রাক টার্মিনাস নিয়ে নেবে পরিবহণ দফতর। সব টাকা ট্রেজারিতে জমা করতে হবে। শিল্পপার্কগুলিতেও কেউ কেউ টাকা চাইছে। এবার থেকে শিল্পপার্কেও আলাদা থানা হবে। ওরা এবার থেকে ওই সব বিষয়গুলো দেখবে।’