নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক সমাজ থেকে গবেষক মায় বিশারদরা বার বারই বলে থাকেন ছোট থেকেই শিশুদের তাঁর মাতৃভাষায় পড়াশোনার শেখানো উচিত। কেননা মায়ের কাছে থেকে বড় হওয়া শিশুরা ছোট থেকেই মায়ের মুখের ভাষা থেকেই ভাষা শেখা ও তা রপ্ত করে। তাই সেই ভাষাতেই শিক্ষাপ্রদান করা হলে ছোট থেকেই শিশুরা তা দ্রুত রপ্ত করতে সক্ষম হবে। কেননা মাতৃভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধসম। এই কথা যে খুব একতা ভুল নয় তা নানা সমীক্ষাতেও বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়েছে। যদিও চাকরিবাকরি পাওয়ার জন্য বা ভাল কেরিয়ার গড়ে তোলার জন্য গোটা দেশেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার করার চাহিদা ও রেওয়াজ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। ঠিক এই অবস্থায় মাতৃভাষার গুরুত্ব আবারও মনে করিয়ে দিলেন মীরু মুর্মু(Miru Murmu)। বাংলার নদিয়া(Nadia) জেলার রানাঘাট মহকুমার হাঁসখালি(Hanskhali) ব্লকের ময়ূরহাট-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর গ্রাম এলাকার বাসিন্দা মীরু দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে(Draupadi Murmu) চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁর গ্রামে একটি সাঁওতালি ভাষার স্কুল(Santali School) খুলে দেওয়ার জন্য।
জানা গিয়েছে, ময়ূরহাট-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতে তো বটেই গোটা হাঁসখালি ব্লকেই বেশ কিছু আদিবাসী পরিবারের বসবাস। ২০১১ সালের সেনসাস অনুযায়ী সরকারি ভাবে এই ব্লকে আদিবাসী মানুষের সংখ্যা ৩ শতাংশের আশেপাশে। সংখ্যার হিসাবে ৯ হাজারের আশেপাশে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি গত এক দশকে সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখন ওই ব্লকে প্রায় ৫ শতাংশ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। হাঁসখালি ব্লক ছাড়াও গোটা নদিয়া জেলায় আরও কয়েক হাজার আদিবাসী পরিবারের বসবাস। কিন্তু গোটা জেলায় আদিবাসীদের জন্য সাঁওতালি ভাষায় পড়াশোনা করার কোনও স্কুল নেই। ফলে সাঁওতালিতে পঠন পাঠন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা। এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রথম আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিলেন মীরু। সেখানে তিনি নিজের গ্রামে সাঁওতালি ভাষার একটি স্কুল খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন যাতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন অলচিকি লিপিতে ও সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠনের সুযোগ পায়।
মীরু নিজে পড়াশোনা জানেন না। সেই সুযোগ তিনি পাননি। তাই পড়াশোনার অসীম গুরুত্ব নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনার জেরে ঢের বুঝতে পেরেছেন। আর তাই নিজের সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে সেটাই চান মীরু। বছর ৫৬’র মীরু নিজেই জানিয়েছেন, ‘আমি লেখাপড়া জানি না। আমাদের উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে। আমাদের মধ্যে শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। জেলার মধ্যে এমন কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, যেখানে আমাদের নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিতে পারে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে অলচিকি হরফ। আমাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার মানুষ নেই। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করতে পারে, সেজন্য এলাকায় নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করলে উপকৃত হবে এলাকার তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ। তাই এলাকার বাসিন্দা সুমন রায়ের সাহায্য নিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতিকে আমি আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। আশা করি রাষ্ট্রপতি আমাদের ভাবাবেগকে গুরুত্ব দেবেন।’