নিজস্ব প্রতিনিধি, বরিশাল: বসন্তের শুরুতে সত্যিই জীবনে বসন্ত এসে গেল বরিশালের বানারীপাড়ার বাসিন্দা আশরাফ আলী ব্যাপারীর। আর সেই বসন্তের দৌলতে জীবন সায়াহ্নে এসে শুরু করলেন জীবনের নতুন ইনিংস। শনিবার রাতে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের সোনাহার গ্রামে ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের বাসিন্দা মোসাম্মৎ বানু বেগমকে (৫৪) বিয়ে করে সংসারী হলেন। আর দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার নতুন জীবন শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণ চাক্ষুষ করতে হাজির হয়েছিলেন আশেপাশের গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা। আশরাফ-মোসাম্মতের বিয়ে ঘিরে কার্যত উৎসবে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চালচুলো না থাকায় জীবনে সংসার পাতার কথা ভাবেননি ৬২ বছরের আশরাফ। ভবঘুরের মতোই কাটিয়ে দিচ্ছিলেন যাযাবর জীবন। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অশক্ত হয়ে পড়েছিল শরীর। শেষ বয়সে বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছিল ‘আশ্রয়ণ’। কিন্তু কে জানতো এই বয়সে তিনি প্রেমে পড়বেন, আর সেই প্রেম গড়াবে বিয়েতে?
যার সাথে নতুন জীবন শুরু করলেন আশরাফ সেই মোসাম্মৎ বানু বেগম(৫৪) স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ে ও জামাইয়ের সংসারেই ছিলেন। অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার সুবাদে এক পর্যায়ে আশরাফ ও বানু বেগমের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সম্মতিতে শনিবার রাতে ঘটা করেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
চাখার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবুল হক টুকু সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রথমে আশরাফ ও মোসাম্মতের বিয়েতে এক লাখ এক টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু আশরাফের আর্থিক সঙ্গতির বিষয়টি মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত নগদ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এলাকার সাধারণ মানুষ নবদম্পতির দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ প্রার্থনাও করেছেন।
৬২ বসন্ত পার করে এসে সংসারী হবেন, তা কখনও ভাবতে পারেননি আশরাফ আলী। এদিন বিয়ের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘একলা থাকতে খুব কষ্ট হতো, সময় মতো খাওয়া দাওয়া করতে পারতাম না। মনের মধ্যে যে কষ্ট ছিল, তা দূর হলো।’ আর পাত্রী বানু বেগম লাজুক কণ্ঠে বললেন, ‘আমি একটা ভরসা পেলাম। সুখে-শান্তিতে যাতে ঘর করতে পারি, তার জন্য সবার আশীর্বাদ ও দোয়া চাই।’