নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রথম বৈঠক হয়েছিল পাটনায়। তার পর বৈঠক হয় বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইয়ে। চতুর্থ বারের জন্য বৈঠকের আসর বসল দিল্লিতে। দেশে তৈরি হওয়া বিজেপি বিরোধী জোট INDIA’র চতুর্থ সেই বৈঠক এখন চলছে দিল্লির অশোকা হোটেলে। সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ। কেননা এই বৈঠকেই ২৪’র ভোটযুদ্ধে(General Election 2024) জোট শরিকদের মধ্যে আসন রফা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল(TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee), সংযুক্ত জনতা দলের নীতিশ কুমার, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব এরা সকলেই চেয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসেই এই আসন রফার সূত্র বার করে নিতে। কিন্তু তখন তা কানে দেয়নি কংগ্রেস। এখন ৩ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে তাঁদের আর দর কষাকষির জায়গা নেই। আর তাই এদিনের বৈঠকে তাঁরা আসন রফা নিয়ে জোট শরিকদের নমনীয়তার ইঙ্গিতই দিল কংগ্রেস(INC)।
জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের আগে এই INDIA জোটের বৈঠকেই বিরোধী দলগুলির মধ্যে আসন রফার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। তিন রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় এবং ব্যর্থতা নিয়ে শরিক দলগুলি জোটের নেতৃত্বে হাত শিবিরকে মানবে না কি, নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরবে, তা-ও এই বৈঠক থেকেই অনেকটা স্পষ্ট হবে। তবে তৃণমূলের মতো দলগুলি অনেক দিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেই দলের নেতৃত্বে জোট হোক। তবে কেরল, পঞ্জাব কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যে খানে শরিক দলগুলি রাজ্যস্তরে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেখানে জোট নির্বিঘ্নে হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মমতা অবশ্য আগেই বাংলা নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দরজা খোলা। তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত বাম ও কংগ্রেস উভয়ের সঙ্গেই। সেই সঙ্গে কৌশলে কংগ্রেসকে মমতা এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলায় কংগ্রেসের মাত্র দু’টি আসন জেতা রয়েছে। তাই তিনি ২টির বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে পারবে না। বামেরা অবশ্য মমতা বা তৃণমূলের সঙ্গে জোট না গড়ারই পক্ষপাতী।
তবে সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন INDIA জোটের বৈঠকে তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে হারের পরে ‘একলা চলো’ নীতি থেকে সরে আসার বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, আসন রফা নিয়েও তাঁরা শরিক দলগুলিকে নমনীয় হওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটে বিভিন্ন রাজ্যে সহযোগী দলগুলির সঙ্গে আসন সমঝোতার লক্ষ্যে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। দলের প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ মুকুল ওয়াসনিকের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ এবং এআইসিসির প্রাক্তন মুখপাত্র মোহন প্রকাশ রয়েছেন বলে কংগ্রেসের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। আর এই পদক্ষেপই বলে দিচ্ছে, দেশের জোট রাজনীতিতে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরির দিন শেষ’ এটা মেনেই নিচ্ছেন কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা। দেশের হিন্দি বলয়ে ধর্ম ও জাতপাতভিত্তিক রাজনীতির আখড়ায় বিজেপির মোকাবিলা করে যে একার শক্তিতে কংগ্রেসের পক্ষে জেতা সম্ভব নয়, এটা এখন কংগ্রেস বুঝতে পেরেছে, মেনেও নিচ্ছে।