নিজস্ব প্রতিনিধি: বহু উথান পতনের মধ্যে দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার ইসলামপুরের কাঞ্চনতলা জমিদার রাঘবেন্দ্র নাথ রায়ের বাড়ির দুর্গাপুজো ৩০০ বছর পেরিয়েছে। এখানকার পুজো ধুলিয়ান বাইশ পুতুলের পূজো বলেই খ্যাত। কেন এই অদ্ভুত নাম? এখানে সপরিবার মা দুর্গার পাশাপাশি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, জয়া, বিজয়া, নন্দী, ভৃঙ্গি, মকর, হাঁস, ইঁদুর, পেঁচা সহ মোট বাইশটি মূর্তির পুজো হয়। তাঁদের উদ্দেশ্যে আলাদা করে ২২ বার ভোগ নিবেদন করা হয়। তাই এই পুজোকে ২২ পুতুলের পুজো বলে ডাকেন স্থানীয় মানুষজন। মোট দুটি চালায় মূর্তিগুলি তৈরি করা হয়।
ইসলামপুরের ধুলিয়ানের রায় পরিবারের দেবী দুর্গার উপর বিরাজমান শিব, তাঁর উপরে মা গঙ্গা। কথিত আছে গঙ্গার ভাঙন রুখতেই মা দুর্গার সঙ্গে গঙ্গাপুজোও করা হয় এই ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়িতে। একচালা প্রতিমার ডানদিকে তারা এবং বামদিকে বিজয়া ও নরসিংহ মূর্তি এবং সেই সঙ্গে লক্ষী-সরস্বতী-গনেশ-কাতিক। পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার রাঘবেন্দ্রনাথ রায়।
রায় পরিবারের পুজোয় ঐতিহ্য আজ আর নেই। কালের নিয়মে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। বা অনেক কিছুই বিলিন হয়েছে। যেমন একসময় হাতি, ঘোড়া-সহ প্রতিমা নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা হতো, যা আজ হয় না। রায় বাড়ির মেয়েরা পালকি চড়ে গঙ্গার ঘাটে যেতেন পুজোর জল আনতে, এই প্রথাও বিলুপ্ত। আগের মতো আর বসে না সানাইয়ের আসর। কারণ জমিদারি প্রথা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে গিয়েছে পুজোর সেই জৌলুষ ও জাঁকজমক। তবে আগের মতোই নিষ্ঠার সঙ্গে আজও দেবী দুর্গা পূজিতা হন ওই জমিদার পরিবারে।
এখানেও মহালয়ার আগেই বোধন হয় দেবী দুর্গার। তার আগে রথের দিন কাঠামোয় মাটির প্রলেপ দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। আজও সপ্তমী ও অষ্টমীতে একটা করে ছাগল বলি হয়। আর নবমী পুজোয় পাঁচটা ছাগল বলি দেওয়া হয়। যার প্রথম বলি উৎসর্গ করা হয় মা গঙ্গাকে। আবার দশমীর দিন কাঞ্চনতলা রায় বাড়িতে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রায় পরিবারের মহিলারা দেবীকে বরণ করেন, পুরুষরা ঢাক বাজান। চলে সিঁদুর খেলা। এরপর দেবীকে কাঁধে করে ঢাক-ঢোল কাঁসর বাদ্য সহকারে ধুলিয়ানে হয় শোভাযাত্রা। তবে দশমীর দিন বাদে কাঞ্চনতলা জমিদার বাড়ির দরজা কিন্তু সকলের জন্যই খোলা থাকে।