নিজস্ব প্রতিনিধি: বার বার তৃণমূলের(TMC) তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে নিজের কালো টাকা ও সম্পত্তি বাঁচানোর পাশাপাশি ও নারদা-সারদা কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাদের হাত থেকে বাঁচতে শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari) বিজেপিতে(BJP) যোগ দিয়েছেন। সেই শর্তেই কার্যত তিনি পদ্ম শিবিরে পা ফেলেছেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দুর সেই স্বস্তি আর বোধহয় থাকছে না। কেননা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI’র পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষ দিল্লিতে শাহি দরবারে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠিতে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নারদা ও সারদা কাণ্ডের তদন্ত ফের শুরু করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দিল্লি থেকে সেই অনুমতি এলেই তাঁরা কলকাতার কার্যালয়েই রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে ডেকে পাঠাবেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। যদিও, ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, CBI-কে এখনই এই অনুমতি নাও দিতে পারে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেননা সামনেই ২০২৪’র ভোট। আর যদিও বা অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে তদন্ত হবে নাম কা ওয়াস্তে। এমনকি এমনটাও হতে পারে নাম কা ওয়াস্তে একটা তদন্ত করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাই হয়তো ঘোষণা করে দেবে শুভেন্দু অধিকারী নির্দোষ।
আরও পড়ুন একিই! স্বামীর দেওয়াল লিখনেই কিনা জুতোপেটা স্ত্রীর
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে CBI কেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নারদা ও সারদা কাণ্ডে তদন্ত শুরু করতে চাইছে? প্রাথমিক ভাবে CBI সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এই দুই মামলার তদন্ত শুরু না হলে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ বা অন্য মামলার অগ্রগতি প্রশ্নের মুখে পড়ছে। নিয়োগ দুর্নীতি বা অন্য তদন্তে যখনই শাসকদলের নেতা ও ঘনিষ্ঠদের কেন্দ্রীয় এজেন্সি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে তখনই শুভেন্দুকে ছাড় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তূণমূল কংগ্রেস CBI-কেই পাল্টা চাপে ফেলে দিচ্ছে। ED’র ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। আদালতেও এই দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। নারদা কাণ্ডে ফিরহাদ হাকিম বা প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের কিংবা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন শুভেন্দুকে ছাড় দেওয়া নিয়ে জনমানসে CBI’র ভাবমূর্তি যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছিল। একই ভাবে শুধুমাত্র বিজেপি নেতা হওয়ার কারণেই সারদার FIR-এ শুভেন্দুর নাম ও প্রচুর প্রমাণ সত্ত্বেও তাঁকে ডাকতে পারছেন না কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। এই ছবিটা বদলাতে চাইছেন CBI আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন বিদ্যুতের বিরুদ্ধে FIR বিশ্বভারতীরই এক আধিকারিকের
সূত্রে জানা গিয়েছে, CBI তাঁদের নিজস্ব কাজের ধারাকে নিরপেক্ষ দেখাতেই এবার বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দুই মামলায় তদন্ত শুরুর জন্য কেন্দ্রীয় কর্তাদের সবুজ সংকেত চেয়ে বিস্তারিত তথ্য ও রিপোর্ট পাঠিয়েছে। নারদা ও সারদা মামলার তথ্য তুলে দিল্লিতে বলা হয়েছে যে, কুন্তল ঘোষের চিঠির বক্তব্য ধরে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা অন্যদের জেরা করতে ডাকা হচ্ছে তখন সুদীপ্ত সেনের চিঠির ভিত্তিতে কেন শুভেন্দুকে ডাকা হবে না? বিশেষ করে কাঁথি সংক্রান্ত ঘটনায় সুদীপ্ত সেন ও সারদার সঙ্গে শুভেন্দুর আর্থিক লেনদেনের যথেষ্ট প্রামাণ্য প্রাথমিক তথ্য ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। কাঁথি পুরসভাকে ব্যাংক ড্রাফট মারফত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন জেলবন্দি সুদীপ্ত সেন। বিজেপি নেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সারদাকর্তার অভিযোগ করা সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত নথি ও তথ্যও ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করছেন সিবিআই কর্তারা। সবচেয়ে বড় কথা CBI ও ED-তে বহু দক্ষ ও যোগ্য অফিসার রয়েছেন যাঁরা প্রচুর পরিশ্রম করে নিয়োগ দুর্নীতি ও অন্যান্য তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। কিন্তু এক শুভেন্দুর জন্যই তাঁদের এই পরিশ্রম জনমানসে ধাক্কা খাচ্ছে বার বার।
আরও পড়ুন বিশ্বভারতীর বেনজির আক্রমণ অমর্ত্যকে, হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীকেও
যেহেতু নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু তদন্ত শুরু করলেই স্রেফ শুভেন্দু ইস্যুতে বিষয়টি ফিকে হয়ে যাচ্ছে, তাই এবার বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে দুই তদন্ত শুরু করতে দিল্লির ছাড়পত্র চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যদিও সেই ছাড়পত্র আদতে আসবে শাহি দরবার থেকে। কেননা CBI হোক কী ED দুই রয়েছে শাহি দরবারের অধীনে। আর সেখানে থেকে চট করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নাও করার ছাড়পত্র আসতে পারে। বা দিলেও বলে দেওয়া হতে পারে, নামমাত্র জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত করে শুভেন্দুকে নির্দোষ বলে দাও। অনেকে আবার এটাও মনে করছেন যে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে সম্ভাব্য বদলের সম্ভাবনা ক্রমশ ফুটে উঠতেই এবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে চাইছেন দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। তাঁরা আর গেরুয়া শিবিরের হাতের মুঠোয় থাকতে চাইছেন না তাঁদের হুকুম মতো ওঠাবসাও করতে চাইছেন না। বরঞ্চ নিরপেক্ষতার পথেই হাঁটরে চাইছেন তাঁরা। আর তার জেরেই এই উদ্যোগ।