নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা(Kolkata) লাগোয়া রাজারহাটের(Rajarhat) বৈদিক ভিলেজের(Vedic Village) গণধর্ষণ ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের সামনে উঠে এল ওই বিলাসবহুল রিসর্টের একের পর এক অনিয়মের ছবি। ইতিমধ্যেই পুলিশ এই ঘটনায় ৪জন যুবককে গ্রেফতার করেছে। শনিবার তাদের বারাসত মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ৭ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন। পুলিশ(Police) এই ঘটনায় আরও ৩জন যুবকের সন্ধান শুরু করেছে। কিন্তু তারই মাঝে বৈদিক ভিলেজের অব্যবস্থার ছবি তদন্তকারীরা পেয়েছেন তা তাঁদেরও রীতিমত বিস্মিত করে তুলেছে। যে ১৩জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল সেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ৮জন নিমন্ত্রিত হলেও বাকি ৫জন নিমন্ত্রিত ছিলেন না যে বার্থ দে পার্টিতে এই ঘটনা ঘটেছে সেই পার্টিতে। তারপরেও কীভাবে তারা এই বিলাসবহুল রিসর্টে ঢোকার ছাড়পত্র পেলেন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। এখনও পর্যন্ত বৈদিক ভিলেজের তরফে এই প্রশ্নের কোনও সদত্তর দিতে পারেননি কেউ। আর তার জেরেই বৈদিক ভিলেজের ম্যানেজারকে(Manager) গ্রেফতার করার ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে পুলিশমহলে।
আরও পড়ুন রাত ১১টার পর খোলা রাখা যাবে না দোকান, নির্দেশ নিউটাউন থানার
চলতি মাসের ৯ তারিখ সকালে বৈদিক ভিলেজের একটি বাংলো বুক করেন নির্যাতিতার বান্ধবীর পরিবার। সেই পার্টি ছিল নির্যাততার বান্ধবীর বাবার জন্মদিনের পার্টি। নির্যাতিতা সেখানে নিমন্ত্রিত ছিলেন। অভিযোগ সেই পার্টিতেই কেক কাটার পরে ঢালাও মদ্য পানের আসর বসে। সেখানেই কোনও ভাবে নির্যাততাকে মাদক মেশানো পানীয় খাওইয়ানো হয় ও তিনি অচেতন হয়ে গেলে তাঁকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে খুব কম করেও ৮জন গণধর্ষণ করে। একই সঙ্গে নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করার ভিডিও তোলা হয় ও তাঁর নগ্ন ছবিও তোলা হয়। ১০ তারিখ সকালে তরুণীর জ্ঞান ফিরলে তিনি বুঝতে পারেন তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি সেই সময় বিষয়টি বৈদিক ভিলেজের ম্যানেজারকে জানালেই তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানাননি। নির্যাতিতা ১১ তারিখ বিকালে ঘটনাটি পুলিশকে জানান। ওই পার্টিতে ঘটনার জেরে সন্দেহভাজন ১৩জন যুবকের মধ্যে মাত্র ১জনকেই চিনতেন নির্যাতিতা। সেই যুবককে গ্রেফতার করতেই বাকি ৩জনের নাম অ পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। সেদিন রাতেই ৪জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু বাকি ৩জনের কোনও সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। কেননা ওই ৩জন কে বা কারা তাদের নিয়ে এসেছিল সে সম্পর্কিত কোনও তথ্যই পাচ্ছে না পুলিশ। কারণ বৈদিক ভিলেজে তাদের ঢোকার সময় নিরাপত্তারক্ষীরা কোনও কাগজপত্র দেখতে চায়নি, এমনকি তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্যও নিয়ে রাখেনি। এই অবস্থায় ওই ৩জনকে শনাক্ত করতে পুলিশের এক্মাত্র ভরসা রিসর্টের সিসিটিভি ফুটেজ। এখন সেই ফুটেজই জোগাড় করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন নদী থেকে বালি-পাথরের চুরি ঠেকাতে কলসেন্টার খুলছে রাজ্য
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার মেডিকেল টেস্ট করা হয়েছে ও তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। যদিও গ্রেফতার হওয়া ৪জন যুবকের আইনজীবীদের দাবি, যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা আদৌ সত্যি কিনা তা বিচার্য বিষয়। চারজনের মধ্যে ওই তরুণী মাত্র একজনকে চিনতেন। তবে পুলিশ এখন সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছে বৈদিক ভিলেজের অব্যবস্থার ওপর। তাঁদের প্রশ্ন, বার্থ ডে পার্টিতে নিমন্ত্রিত নয় এমন ৫জন কীভাবে রিসর্টে ঢোকার ছাড়পত্র পেল? পরিচয়পত্র ছাড়া ওই ৫ জনকে রিসর্টে থাকতেই বা দেওয়া হল কেন? যে ৪জন যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে মাত্র ১জনকে নির্যাতিতা আগে থেকে চিনতেন। ওই যুবক সেক্টর ফাইভের একটি তথ্যপ্রযুক্ত সংস্থার কর্মী। বাকি ৩জন কলেজ পড়ুয়া, নির্যাতিতা তাদের চিনতেন না।
আরও পড়ুন আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী
বৈদিক ভিলেজের ভিতরে বাংলো বাড়ির সংখ্যা বিস্তর। প্রত্যেকটি বাংলোই ব্যক্তিগত মালিকাধীন। জন্মদিনের পার্টির জন্য সেই রকমই একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হ্যেছিল। যে বাংলোটি বুক করা হয়েছিল তার মালিক আবার ব্রিটেনে থাকেন। অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে ওই বাংলোটি বুক করা হয়। যখন বুক করা হয়েছিল, তখন ৮ জন যুবকের অতিথি হিসাবে থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু জন্মদিনের পার্টিতে ছিল ১৩ জন যুবক, অন্তত নির্যাতিতার বয়ান সেই রকমই। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বাংলো বুক হওয়ার পর মেল করে জানিয়ে দেওয়া হয় বৈদিক ভিলেজ অ্যাসোসিয়েশনে। অ্যাসোসিয়েশন থেকে আবার মেল যায় মেন গেটে সিকিউরিটি অফিসে। এরপর অতিথিদের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে তাঁদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। আর এখানেই প্রশ্ন পুলিশের ৮ জনের বদলে ১৩ জন কীভাবে রিসর্টে ঢুকল? শুধু তাই নয়, ৫ জনের আবার পরিচয়পত্রও ছিল না! জন্মদিনের পার্টির জন্য যারা বাংলো বুক করেছিল, তাঁদের ভূমিকাও এখন আতস কাঁচের তলায়। তবে নিরাপত্তার গাফিলতির জেরে পুলিশ বৈদিক ভিলেজের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করার কথা ভাবছে বলেই সূত্রে জানা গিয়েছে।