নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনা আধিকারিক রবার্ট কিড(Robert Kyd) ১৭৮৭ সালে যে বাগানের ভিত্তি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটাই কার্যত মহীরুহ হয়ে ওঠে বাগানের সুপারিটেন্ডেন্ট তথা বোটানিক উইলিয়াম রক্সবার্গের(William Roxburgh) হাত ধরে। তাঁর হাত ধরেই বাগানের বিস্তার ঘটে ২৭৩ একর জমির ওপর। আসে জাতীয় উদ্যানের শিরোপাও। স্বাধীনতার পরে সেই উদ্যানের দায়িত্ব যায় কেন্দ্রের হাতে। নাম তাঁর শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন(Shibpur Botanical Garden)। কেন্দ্র সরকার অবশ্য এই বাগানের নাম বদল করেছে ২০০৯ সালে। তবে তাতে বাঙালি ক্ষুব্ধ হয়নি। কেননা এই জাতীয় উদ্যানের এখন নতুন নাম আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন। এবার সেই গার্ডেনকে ঘিরেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলেন বাংলার স্বনামধন্য পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত(Subhash Dutta)। কেন এই মামলা? গঙ্গা(Ganga) দ্রুত গিলে খাচ্ছে এই জাতীয় উদ্যানকে। কিন্তু কিছুই করছেন না বাগান কর্তৃপক্ষ। কিছু করছে না কেন্দ্র সরকারও। তাই বাগান বাঁচাতে মামলা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন তারিখ পে তারিখ, কিন্তু আস্থা নেই দলেরই কর্মীদের
২৭৩ একর জমিজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই জাতীয় উদ্যানের একপ্রান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। দক্ষিণ হাওড়ার বি গার্ডেন এলাকার লঞ্চঘাটের পাশেই রয়েছে একটি খাল। তার পাশ থেকেই বাগানের শুরু। নাজিরগঞ্জ লঞ্চঘাট পর্যন্ত গঙ্গার ধার ধরে এই বাগান চলে গিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বি গার্ডেনের লঞ্চঘাটের খালের পাশ থেকে গঙ্গা একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে বাগানকে। সেখানে ভাঙন দুরন্ত গতিতে ঘতে চলেছে। অথচ সেই ভাঙন ঠেকাতে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না বাগান কর্তৃপক্ষ। এই জাতীয় উদ্যান শুধু যে কয়েক হাজার গাছের সমাহারে সমৃদ্ধ তাই নয়, এই বাগান কার্যত হাওড়া ও কলকাতারও অক্সিজেন ভাণ্ডার হিসাবে সুপরিচিত। কিন্তু যে ভাবে গঙ্গার ভাঙনে এই বাগানের ভূমিক্ষয় হচ্ছে, তাতে করে দ্রুত নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে বাগানের একতা বড় অংশ। তাই এই জাতীয় উদ্যানকে রক্ষার আর্জি জানিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত।
আরও পড়ুন বন্দে ভারতে যাত্রা শুরুর প্রথম দিনেই গোলযোগ, পরিষেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট যাত্রীরা
সুভাষবাবুর দায়ের করা মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, এই জাতীয় উদ্যানে ১২ হাজার প্রজাতির গাছের দেখা মেলে। এরমধ্যে অনেক গাছই আবার দুর্মূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির। কিন্তু গঙ্গার ভাঙনে সেই সব গাছে এখন বিপন্ন। বিপন্ন তাদের ভবিষ্যৎ। বাগানে কীভাবে ভূমি ক্ষয় হচ্ছে, কীভাবে গঙ্গায় গাছ পড়ে যাচ্ছে তার ছবি তুলেও তিনি মামলার আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিয়েছেন। এই জাতীয় উদ্যান এখন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের আওতাধীন সংস্থা বটানিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে রয়েছে। তাঁদের হাতেই রয়েছে এই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। কিন্তু অদ্ভূত ভাবে তাঁরাও এই সমস্যার সমাধান করার জন্য কোনও উদ্যোগ নেননি। আরও বড় কথা এই বাগানের চারদিকেই রয়েছে ঘনজনবসতি। বি গার্ডেনের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু থানার কোলে মার্কেট, নস্কর পাড়া, দানেশ সেখ লেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষের বসতি এই উদ্যানের পাশেই। এলাকায় দিন দিন জনবসতি আরও বেড়ে চলেছে একের পর এক বহুতল মাথা তোলায়। গঙ্গা যদি এবার হু হু করে এগিয়ে আসে তখন কিন্তু বাগানের পাশাপাশি এইসব এলাকার জনবসতিও বিপন্ন হয়ে পড়বে।