নিজস্ব প্রতিনিধি: দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার ডাকঘরের কর্মীদের নিয়ে গঠিত Postal Co-Operative Society-তে কোটি টাকার ওপর তছরুপ হয়েছে বলে Audit-এ ধরা পড়েছে। রিপোর্টের একাংশ প্রকাশ্যে আসতেই ওই সমবায়ের চার কর্তা ও দুই কর্মীর নামে বর্ধমান আদালতে(Burdhwan Court) মামলা করেছিলেন সেখানকার প্রধান করণিক নন্দগোপাল দে। বিচারক সেই মামলা শুনে বর্ধমান থানাকে FIR করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার ওই সমবায়ের সম্পাদক নূরজামাল শেখ বর্ধমান থানায় একটি অভিযোগ করে জানিয়েছেন, নন্দগোপালই সমবায়ের ‘সব’ ছিলেন। Audit শুরু হতেই তিনি ‘বেপাত্তা’ হয়ে যান। সমবায়ের টাকা তছরুপে নন্দগোপালই জড়িত। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে সমবায় দফতর, জেলা প্রশাসনের কাছে ও থানাতেও জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন রাজ্য সঙ্গীতের স্বীকৃতি পাচ্ছে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল…’!
জেলা পুলিশ(Police) প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি অভিযোগকে একত্র করে একটি FIR করে তদন্ত শুরু হয়েছে। নন্দগোপালের হিসেব অনুযায়ী ওই সমবায়ে ১ কোটি ৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৬৫ টাকা তছরুপ হয়েছে। আবার সমবায়ের সম্পাদকের অভিযোগ, প্রাথমিক অডিটে আয়-ব্যয় হিসেবে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার মতো গরমিল রয়েছে। তার মধ্যে নন্দগোপালবাবু ৬৩-৬৪ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ। ওই সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ সাহা জানিয়েছেন, নন্দগোপালবাবুর বিরুদ্ধে এর আগে বর্ধমান থানায় ডায়েরিও করা হয়েছিল। সমিতির পরিচালকরা বর্ধমানের বাইরে থাকেন। অফিস বর্ধমান শহরে হওয়ায় নন্দগোপালবাবুই প্রধান করণিক, কোষাধ্যক্ষ, অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন। তছরুপ যা করার উনিই করেছেন।
আরও পড়ুন ৩৫১ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগে কলকাতার সংস্থার অফিসে CBI তল্লাশি
এদিকে নন্দগোপালবাবুর অভিযোগ, ২০২১-’২২ সালের অডিটে গরমিল পাওয়া গিয়েছে। সমবায়ের কর্তা-কর্মীদের ডেকে পাঠালে নথি দিতে তাঁরা অস্বীকার করেন। ফলে, অডিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসেবে ওই পরিমাণ টাকা গরমিল পাওয়া গিয়েছে। তিনি আদালতে চেয়ারম্যান, সম্পাদক, পরিচালন সমিতির দু’জন সদস্য ও দু’জন কর্মীর নামে অভিযোগ জানান। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, কর্তারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোনওরকম ভাউচার ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছেন। মোট ৭৮লক্ষ ৩৬ হাজার হাজার টাকা অভিযুক্তরা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, টাকা জমা দিতে বললেই এড়িয়ে যেতেন কর্তারা। টাকা চাওয়ার অপরাধে ১৫ এপ্রিল ফাঁকা স্ট্যাম্প পেপারে সই করার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। অস্বীকার করলে মারধর করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাঁর ঘাড়ে ২০লক্ষ টাকার দায় দিতে ফাঁকা কাগজে সই করার জন্য বলা হয়। তিনি অস্বীকার করলে আটকে রেখে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন ১৮ থেকে ২০ হাজার মার্জিনে ধূপগুড়িতে হারবে বিজেপি
জানা গিয়েছে, ১৯২০ সালে এই সমবায়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দুই বর্ধমান ছাড়াও পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়ার কয়েকশো ডাককর্মী এই সমবায়ের সদস্য। সেখানকার পরিচালন সমিতির কর্তাদের দাবি, অডিট শুরু হতেই নন্দগোপালবাবু ‘বেপাত্তা’ হয়ে গিয়েছেন। নথিপত্র দেওয়ার জন্যে বারবার ডাকা হলেও তিনি আর অফিসমুখো হননি। এনিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জবাব না পেয়ে শোকজও করা হয়েছে। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অভিযোগ সামনে আসতে থাকায় সমবায় কর্তা, জেলা প্রশাসন থেকে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। ওই সমবায়ের কর্মী তথা অভিযুক্ত প্রসেনজিৎকুমার দে বলেন, সমবায় থেকে সরকারি নিয়মনীতি মেনে ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেজন্য নিজে বাঁচার জন্যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। নন্দগোপালবাবুর আইনজীবী কমল দত্তের অভিযোগ, কর্তারা যে সমবায়ের টাকা নয়ছয় করেছেন তা স্পষ্ট। তার যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। এমনকী শুধুমাত্র একটি কাগজ(স্লিপ) দিয়ে দিনের পর দিন কর্তারা টাকা তুলে নিয়েছেন। এখন ফেঁসে গিয়ে নন্দগোপালবাবুর ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন।