এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

সম্রাট হুমায়ুনের আমল থেকে এই বনেদি পুজোর সূত্রপাত, জানুন ব্যারাকপুরের ৪৯২ বছরের দাশগুপ্ত বাড়ির পুজোর ইতিহাস……

সুস্মিতা ঘোষ: গোটা শহর জুড়ে বনেদি-বারোয়ারি-থিম পুজোর লড়াই। কে কার আগে ছুটবে সেই নিয়েই চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে আধুনিকতার দিক দিয়ে থিম বরাবরই প্রথম হলেও, বাঙালি ঐতিহ্যকে কিন্তু ধরে রেখেছে বনেদি বাড়ির পুজোগুলি। না সেই পুজো কখনই থিমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আসে না। কারণ সর্বদা সেরার সেরা। কারণ পূর্ব-পুরুষের আমলের পুজো বংশধররা সব পালন করে যাচ্ছে। এটা কী চারটি খানি কথা, শুধু তাই নয়, একই নিয়ম, একই মায়ের মূর্তি তৈরি করা সবটাই পূর্ব পুরুষের দেখানো পথ অনুসরণ করেই তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই পুজো। সুতরাং আধুনিকতার দিক দিয়ে থিম পুজো সর্বেসর্বা হলেও বনেদিয়ানার কাছে কখনই টেক্কা পাবে না এই পুজো। গোটা বাংলার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক বনেদি পুজো। তবে লোকবল এবং আর্থিক অভাবে এখন অনেক বনেদি বাড়ির পুজোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু কিছু বনেদি বাড়ির পুজো এখনও তাঁদের বংশধরেরা এগিয়ে নিয়ে চলেছে। যেমন- উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের কালিয়ানিবাস এলাকায় কবিরাজ  দাশগুপ্ত বনেদি বাড়ির পুজো। এই পুজোর বয়স প্রায় ৪৯২ বছরের অধিক। ‘এই মুহূর্তে’ নিউজ পোর্টালের তরফ থেকে সম্প্রতি আমরা যোগাযোগ করেছিলাম এই বনেদি পরিবারের সঙ্গে। সেই বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা জেনেছি এই পুজোর ইতিহাস।

দাশগুপ্তরা প্রধানত বাংলাদেশের সেনহাটি জায়গার মানুষ। যেখানে ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের আদি বাসস্থান ছিল। প্রথমে এই পুজোটি শুরু করেন কবিন্দ্র নরহরি দাশ। সালটি তখন ১৫৩০ খ্রিস্টপূর্ব। জানা যায়, সম্রাট হুমায়ুনের সময় থেকেই এই পুজো শুরু। কবিন্দ্র নরহরি দাশ মহাশয় মা জগদম্বা স্বপ্নাদেশ পেয়ে ঠাকুর সর্বানন্দের দীক্ষা লাভ করেন, এবং পরে সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী একটি বাসুদেব বিগ্রহ, কালিকাপুরাণ এবং একটি দক্ষিণা বার্তা শঙ্খ লাভ করেন। সেই অনুযায়ী ১৫৩০ সালে এই রূপে মা জগদম্বার পুজো স্থাপন করেন।

স্বপ্নাদেশে পাওয়া ঠাকুরের নির্দেশ অনুযায়ী এই পুজোর সমস্ত নিয়ম কানুন পালন করা হয়।

প্রথমে এই পুজো সেনাহাটিতে করা হলেও, পরে এই পুজো স্থানান্তরিত হয়ে আসে বাংলাদেশের যশোর কালিয়ায়। এরপর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই পুজো কলকাতার হাওড়ায় চলে আসে, এবং তাঁর হাওড়ার কোয়ার্টারের বাড়িতে এই পুজো সম্পন্ন করেন। সেখানেই তখন দাশগুপ্তদের ভিটে ছিল। তবে বর্তমানে তা আর নেই। কলকাতায় এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বর বিনয় কুমার দাশগুপ্ত। সেখান থেকেই ১৯৫৬ সালে এই পুজো ব্যারাকপুরে স্থানান্তরিত হয়।

দাশগুপ্তদের ব্যারাকপুরের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় মা জগদম্বার মূর্তি। এই বাড়ির একজন সদস্য, শ্রীমান অরিজিৎ দাশগুপ্তর কথায়, কয়েক প্রজন্ম ধরে এই পুজো এখনও বহাল রয়েছে। বর্তমানে ব্যারাকপুরের কালিয়ানিবাস নামক জায়গায় তাঁদের বাসস্থান। তাঁদের বাড়ি দুর্গা মায়ের নাম জগদম্বা। মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী জগদম্বা রূপেই পূজিত হন দুর্গা মা। সেই অনুযায়ী এই মায়ের মূর্তিও আলাদা। আজও এই রূপেই পূজিত হচ্ছেন মা। শান্ত-শিষ্ট মা তার চার সন্তানকে নিয়ে আসেন। বাড়িতেই বানানো হয় এই মূর্তি। বংশ পরম্পরায় এই পুজোর যেমন প্রজন্ম বদল হয় তেমনি বদল হয়, পুরোহিত এবং মায়ের মূর্তি বানানোর শিল্পীরাও। মায়ের গায়ের বর্ণ হয় তপ্তকাঞ্চন বর্ণের। এই মূর্তিতে অসুরের নিচে নেই তার বাহন মহিষ।

মহালয়ার পর প্রতিপদের দিন পুজোর ঘট বসানো হয়। আগে এই পুজোতেও পাঠা বলি দেওয়া হলেও বর্তমানে চিনি দিয়ে বানানো পাঠার বলি হয়। আগে বলির মাংসও ভোগ হিসেবে বিতরণ করা হত। তবে এখন যেহেতু বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাই আর ভোগ দেওয়া হয় না। এছাড়াও যেহেতু তন্ত্র অনুযায়ী এই পুজো করা হয়, তাই দেবীর আদেশ অনুযায়ী সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর রাতে মায়ের ভোগের মধ্যে প্রধান থাকে, সুরা, মাছ-মাংস। এটাই তাঁদের বাড়ির পরম্পরা। দেবীদত্ত কালিকাপুরাণ অনুযায়ী এই পুজোর সমস্ত নিয়ম আজও অব্যাহত।

নিরামিষ নয়, মাছ-মাংসের নানান পদ মাকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। বর্তমানে এই পরিবারের মাথা মহাশয় অনুপ দাশগুপ্ত। তিনিই গুরুজন হিসেবে রয়েছেন। তাঁরা ছিলেন ১৪ ভাই, তবে বর্তমানে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গিয়েছেন। তাঁদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের তালিকায় রয়েছেন, সুব্রত দাশগুপ্ত, সরিৎ, সুদীপ, অরিজিৎ ইন্দ্রনীল, দেবব্রত এবং অনির্বাণ তাঁরাই এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁদের বাড়িতে প্রায় ৪০ জন সদস্য। তবে পুজোর দিনগুলিতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮০ জনের। বাড়ির মেয়ে বউ-রাই এই পুজোর সমস্ত ব্যবস্থা করে থাকেন।

অষ্টমী-নবমী জুড়ে ভোগ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও এই পুজোর আরেকটি নিয়ম, যে যাদের বাড়িতে এই পুজো হবে, সেই বাড়ির কাউকে তন্ত্র ধারকের কাজ করতেই হবে। উল্লেখ্য, শ্রীমান অরিজিৎ দাশগুপ্তর কথায়, তাঁদের পরিবারের মধ্যে একাধিক মানুষ ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাই তাঁদের বাড়ির ইতিহাস শুধু দুর্গা পুজোয় আটকে নেই, ইতিহাস ঘাটলে দাশগুপ্তদের পরিবারেরও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উল্লেখ পাওয়া যেতে পারে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

নিউটাউনে উদ্ধার হওয়া ক্ষতবিক্ষত যুবক করুণাময়ীর এইচএসবিসি ব্যাংকের কর্মী

বসিরহাট আদালতে সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশার’ চোখে জল

নির্বাচনের আগে ভাটপাড়ায় বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার

গৌরাঙ্গনগরে ১০ বছর ধরে তালা বন্ধ অবস্থায় বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে, উদ্ধার করল পুলিশ

সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ডে বেআইনি বাড়ির অংশ ভেঙে দিল কর্পোরেশন

মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে, ফল পাবেন মোদি, দাবি শোভনদেবের

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর