নিজস্ব প্রতিনিধি: মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে নদী ও সমুদ্র। এক দিকে বটতলা, মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদী। অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর(Bay of Bengal)। সাগরদ্বীপে যাওয়ার সময়ে ডান দিকে পড়ে দ্বীপটা। এক সময়ে সাগরদ্বীপেরই অংশ ছিল। দুই দ্বীপের মাঝে ছিল শুধু ছোট একটা খাল। অনেকে সাঁতরে ওই খাল পেরোতেন। সেই খাল এখন বেড়ে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার চওড়া নদী হয়ে গিয়েছে। দুটো দ্বীপই এখন ক্রমশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সাগর আর নদী গিলে খেয়েছে অনেকের জমি। খেয়েছে ঘরবাড়িও। গিলে খেয়েছে চাষের জমি, পানের বরজও। প্রত্যেক বার কোটালের সময়ে বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে। প্রতিবারই কেউ না কেউ ভিটেমাটি হারান। লোকসংখ্যাও কমে গিয়েছে আগের থেকে। সাকুল্যে ৩ হাজার ভোটার(Voter)। তাঁরাই এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) আগে বলছে, ‘কী হবে ভোট দিয়ে, নদী তো জমি ফেরাবে না’। যেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরা এই কথা বলছেন সেই দ্বীপের নাম ঘোড়ামারা(Ghoramara Island)। দক্ষিণ ২৪ পরগনা(South 24 Pargana) জেলার কাকদ্বীপ মহকুমার(Kakdwip Sub Division) সাগর ব্লকেরই(Sagardwip Block) একটি অংশ। গ্রাম পঞ্চায়েত নামও ঘোড়ামারা। যার অর্ধেকতাই তলিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন বউয়ের সামনেই মামীকে জড়িয়ে ধরে চুমু, তারপরই ভয়ঙ্কর কাণ্ড
ঘোড়ামারা দ্বীপ ক্রমশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। আর তার জেরে ক্রমশ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি ও অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিলেছে সাগরদ্বীপে পুনর্বাসন মিলবে। কিন্তু পাট্টা পেলেও এখনও পুনর্বাসন মেলেনি। তাঁদের আশঙ্কা, এই দ্বীপ এখন যেটুকুও আছে মাথা তুলে তাও আর বেশি দিন টিঁকবে না। এরপর কোথায় যাবেন তাঁরা, সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সকলে। পরিবেশবিদদের মতে, নদীর স্রোত এখানে বেশি। ভূপৃষ্ঠের নীচের অংশে বালির ভাগ বেশি, সেই অংশ দুর্বল হওয়ায় সহজে ক্ষয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নীচের অংশ ক্ষয়ে গিয়ে নদীর পাড় ঝুলছে শূন্যে। ওই অংশ ক্রমশ ভারী হয়ে গিয়ে ধসে পড়ছে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রে জলস্তর বৃদ্ধিও ভাঙনের অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন আসন সংরক্ষণের গেরোয় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী, দিলেন ভোট বয়কটের ডাক
ঘোড়ামারার একটি অংশ লোহাচরা তলিয়ে গিয়েছে আগেই। খাসিমারাও অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছে। স্রোতের আঘাতে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে পাত্রপাড়া, গিরিপাড়া, মাইতিপাড়া, চুনপুরির মতো গ্রামগুলি। সরকারি তথ্য বলছে, লোকসংখ্যাও কমে গিয়েছে আগের থেকে। বর্তমানে ১১২৫টি পরিবারের বাস ওই দ্বীপে। হাজার তিনেক ভোটার। এলাকায় কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। কখনও সখনও একশো দিনের কাজ মেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা সমুদ্রে মাছ ধরা। অনেকেই কাজের খোঁজে চলে যান ভিন রাজ্যে। ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর জানিয়েছেন, ‘খাসিমারার দিকে নদীবাঁধ বেহাল। সেচ দফতরকে বলেছি কাজ করার জন্য। অন্যান্য দিকে বাঁধের কাজ চলছে।’ সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘এ বছরই ৩০টি পরিবার পুনর্বাসন পাবে। নদীবাঁধের সমস্যার বিষয়ে সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করা হবে।’