নিজস্ব প্রতিনিধি: মান্থার প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হল কলকাতায়। তিলোত্তমায় সর্ব অংশই এদিন হল বরুণ দেবের আশীর্বাদ ধন্য। অন্ধ্রের কাকিনাড়ায় হয়েছিল মান্থার ল্যান্ডফল। তার প্রভাবে বাংলাতেও বৃষ্টি চলেছে মঙ্গলবার থেকে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার থেকেই। বুধবার ভোর থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি চলেছে। তবে তা কার্যত ছিল ঝিরি ঝিরি। বেলা বাড়তেই আকাশ কালো করে নেমে আসে বর্ষণ।

ইদানিং সময়ে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায় কলকাতায়। কিছুদিন আগে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে জল থই থই অবস্থা হয়েছিল কলকাতার। জমা জলে ডুবে গিয়েছিল বিদ্যুতের খুঁটি। ফলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুও হয়েছিল অনেকের। তাই বৃষ্টি হোক, কিন্তু অতিবৃষ্টি না হোক তাই চাইছেন তিলোত্তমার বাসিন্দারা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল মান্থার প্রভাবে বৃষ্টি হবে কলকাতাতেও। তাই মানুষ প্রস্তুত ছিলই। বুধবার সকালে মানুষকে ছাতা আর রেনকোট সঙ্গে করে নিয়ে বেরোতে দেখা গিয়েছে। অনেকের ধারণা, মান্থার ভ্রূকুটি কাটলেই এবার শীত পড়তে শুরু করবে।

ঘূর্ণিঝড় মান্থার পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে বাংলায়। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সতর্ক করতে উপকূলে লাগাতার মাইকিং চালানো হচ্ছে। অকাল দৃষ্টিতে চাষে ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা। দুই বঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হবে। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কন্ট্রোল রুম চালু করে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। উত্তরে অন্তত ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

মান্থার ঝাপটায় প্রবল সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। অকাল বৃষ্টির ফলে ফুসল বাঁচাতে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে চাষের জমি। নবান্নে বসেছে জরুরি প্রশাসনিক বৈঠক। বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে উত্তরবঙ্গকে। উত্তরবঙ্গে ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসজারি করেছে আলিপুর।  উত্তরবঙ্গের সমস্ত আধিকারিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকদের সেচের জমির কাছাকাছি উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মান্থা তাণ্ডব চালিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। সেই সঙ্গে চলেছে লাগাতার বৃষ্টি। বইছে ঝোড়ো হাওয়া। মান্থার প্রভাবে অন্ধ্রের জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাতে উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় মান্থা। বর্তমানে মান্থা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপট এখনও কমেনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মান্থা ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মান্থা নরসাপুর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর-পশ্চিম মছলিপত্তনম থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে এবং কাকিনাড়া থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। স্থলেভাগে প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে থাকে মান্থা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গোদাবরী,  কৃষ্ণা এবং পূর্ব গোদাবরী এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে।

মৌসম ভবন তাদের X হ্যান্ডেলে লিখেছে, “সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মান্থা মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে কাকিনাড়া পেরিয়ে গিয়েছে।” মান্থার দাপটে উপকূলীয় এলাকায় বেশ কিছু গাছ পড়ে গিয়েছে। অন্ধ্রে এক মহিলার মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঝড়ের দাপটে একটি গাছ উপড়ে ওই মহিলার বাড়ির উপর পড়েছিল বলে জানা যায়। তার জেরেই প্রাণহানি। ওই এলাকায় নারকেল গাছ উপরে এক নাবালক এবং অটোচালক গুরুতর জখম হয়েছে। নেল্লোর এলাকায় ক্রমাগত ৩২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলছে বৃষ্টি। নিম্নবর্তী এলাকা গুলিতে বন্যার সর্তকতা জারি করা হয়েছে।

মান্থার প্রভাবে বিঘ্ন ঘটেছে বিমান চলাচলেও। আগাম সর্তকতা হিসেবে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরে ৩২ টি, বিজয়ওয়াড়ায় ১৬টি, এবং তিরুপতিতে ৪টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ১২০ টি ট্রেনও। রাজ্যজুড়ে চারশোরও বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। উদ্ধারকার্যে পূর্ণ সহযোগিতা করছে এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ।